অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের আগে কোচ রাসেল ডমিঙ্গো ও অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ বলেছিলেন, সিরিজ জয় এবং বিশ্বকাপ প্রস্তুতি, দুটি লক্ষ্যই আছে তাদের। দুটির সমন্বয় করেই তারা এগোতে চান। সিরিজে যে উইকেটে খেলেছে বাংলাদেশ এবং যে কৌশল বেছে নিয়েছে, তাতে পরিষ্কার ফুটে উঠেছে, বিশ্বকাপ প্রস্তুতির চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্ব পেয়েছে অস্ট্রেলিয়ানদের বিপক্ষে জয়। কিংবা জয়কেই মনে করা হয়েছে ভালো প্রস্তুতি।
মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের উইকেট এমনিতেই বেশির ভাগ সময় মন্থর থাকে। বল পিচ করে একটু থমকে আসে। শট খেলা এখানে বরাবরই কঠিন। এমনকি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটেও, বিপিএল ও অন্যান্য ঘরোয়া আসরে এখানে বেশির ভাগ সময়ই রান বেশি হয় না। এবার অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজে উইকেট ছিল স্বাভাবিকের চেয়েও মন্থর, টার্নও করেছে বেশ। বাউন্স কখনও কখনও ছিল অসমান।
অস্ট্রেলিয়ার মূল ব্যাটসম্যানদের প্রায় কেউই ছিল না এই সফরে। অনভিজ্ঞ ব্যাটিং লাইন আপের বিপক্ষে নিশ্চিতভাবেই বাংলাদেশ এই ধরনের উইকেটে সিরিজটি খেলতে চেয়েছে। বর্ষা মৌসুমে উইকেট স্যাঁতস্যাঁতে থাকায় তা ব্যাটিংয়ের জন্য হয়ে উঠেছে আরও কঠিন।
দুই দলের ব্যাটসম্যানরাই এখানে ধুঁকেছেন প্রবলভাবে। তবে অনুমিতভাবেই অস্ট্রেলিয়ানদের ভোগান্তি ছিল বেশি। বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ে একটু কম ভোগায় এবং বোলিংয়ে তুলনামূলক ভালো করায় জিতে নিয়েছে সিরিজ।
বাংলাদেশ এটিই চেয়েছিল। সিরিজ জয়।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম পর্বের খেলাগুলি হতে পারে ওমানে। প্রত্যাশিতভাবে সেই ধাপ পেরিয়ে গেলে পরের পর্বের খেলা আবুধাবি, দুবাই ও শারজাহতে। কোনো মাঠেই উইকেট মিরপুরের মতো এতটা ব্যাটিং দুরূহ থাকবে না। শারজাহতে তো মাঠ ছোট, উইকেট বেশির ভাগ সময় ব্যাটিং স্বর্গ। ১৮০-২০০ সেখানে নিয়মিতই হয়। অন্য মাঠগুলো আকারে বড়, তবে উইকেট সাধারণত ব্যাটিং সহায়কই। যদিও বিশ্বকাপের আগে আরব আমিরাতে আইপিএল হবে প্রায় এক মাস ধরে। উইকেটগুলো অতি ব্যবহারে ক্লান্ত ও মন্থর হয়ে উঠতে পারে। তার পরও মিরপুরের মতো ১২০ রানেই জয়ের স্কোর হবে না নিশ্চিতভাবেই।
তবে ব্যাটিং কিংবা স্পোর্টিং উইকেটে খেলে হেরে যাওয়ার চেয়ে সহায়ক উইকেটে জয়ের বিশ্বাস পাওয়াকেই এই সিরিজে বেছে নিয়েছে বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আগে কখনও টি-টোয়েন্টি জেতেনি বাংলাদেশ, সিরিজ জেতেনি কোনো সংস্করণেই। এবার ছিল অপূর্ণতাগুলি ঘোচানোর সুবর্ণ সুযোগ, ডমিঙ্গো-মাহমুদউল্লাহরা তা হাতছাড়া করতে চাননি।
ক্রিকেটে একটা কথা প্রচলিতই আছে, ‘জয়ের চেয়ে আদর্শ প্রস্তুতি আর নেই।’ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজে শারজাহ-দুবাইয়ের মতো উইকেট বানিয়ে খেলে হেরে গেলে, বিশ্বকাপ প্রস্তুতিতে তা খুব একটা কাজে লাগত বলে মনে হয় না। মনোবলই থাকত তলানিতে।
এই মনোবলকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন সাকিব আল হাসান। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের ম্যান অব দা সিরিজ, যাকে মনে করা হয় বাংলাদেশের সবসময়ের সেরা ক্রিকেটার ও ক্রিকেট মস্তিষ্ক যার খুব ক্ষুরধার এবং গত ১০ বছর ধরে যিনি ক্রিকেট বিশ্বজুড়ে খেলে বেড়াচ্ছেন ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট, সেই সাকিবের মতে জয়ের বিশ্বাসই দারুণ প্রস্তুতি।
“স্কোরকার্ড দেখে হয়তো অতটা আত্মবিশ্বাসী মনে নাও হতে পারে। তবে জিম্বাবুয়েতে সিরিজ জয়, এখানে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজ জয়, এরপর নিউ জিল্যান্ডের সঙ্গে আছে, এসব আমাদের অনেক আত্মবিশ্বাস জোগাবে বিশ্বকাপের দিকে এগিয়ে চলার পথে। আমার মনে হয় ভালো প্রস্তুতিই হবে।”