ইলন মাস্ককে হটিয়ে বিশ্বের শীর্ষ ধনী কে এই বার্নার্ড আর্নল্ট?

আন্তর্জাতিক

বিশ্বের ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় বৈদ্যুতিক গাড়ি কোম্পানির টেসলার কর্ণধার ইলন মাস্ককে হটিয়ে শীর্ষে উঠে এসেছেন ফরাসি ধনকুবের সিইও বার্নার্ড আর্নল্ট। তিনি বিলাসবহুল পণ্য এলভিএমএইচ মোয়েত হেনেসি লুই ভিতনের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। তার মোট সম্পদের পরিমাণ ২০৭.৬ বিলিয়ন ডলার। আর ইলন মাস্কের মোট সম্পদের পরিমাণ ২০৪.৭ বিলিয়ন ডলার। তৃতীয় অবস্থানে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আমাজনের সহপ্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস; তাঁর সম্পদমূল্য ১৮১ দশমিক ৩ বিলিয়ন বা ১৮ হাজার ১৩০ কোটি ডলার। ফোর্বস ম্যাগাজিন শীর্ষ ধনীর এই তালিকা প্রকাশ করেছে। তালিকা অনুসারে, শীর্ষ দশে থাকা নয়জনই যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। ১১তম স্থানে রয়েছেন ভারতের ধনকুবের মুকেশ আম্বানি, অর্থাৎ এশিয়ার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি তিনি। মুকেশ আম্বানির মোট সম্পদের পরিমাণ ১১০ বিলিয়ন ডলার।

বিশ্বের শীর্ষ ধনী কে এই বার্নার্ড আর্নল্ট?

বার্নার্ড আর্নল্ট ১৯৪৯ সালে ফ্রান্সের উত্তরে রুবেইক্সে জন্মগ্রহণ করেন। প্যারিসের বিখ্যাত প্রকৌশল স্কুল ইকোল পলিটেকনিক থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন তিনি। এরপর পারিবারিক ব্যবসায়ে যোগদানের মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু হয় তার। ব্যবসায়ে ধারাবাহিক পদোন্নতির মাধ্যমে ১৯৭৮ সালে পারিবারিক প্রতিষ্ঠান ফেরেট-স্যাভিনেল (নির্মাণ সামগ্রীর কোম্পানি)-এর চেয়ারম্যান হন তিনি। এর বছর ছয়েক পরে, আর্নল্ট ফরাসি সরকারের কাছ থেকে দেউলিয়া ঘোষিত টেক্সটাইল কোম্পানি বুসাক সেন্ট-ফ্রেস কিনে নেন। দেউলিয়া ঘোষিত এই টেক্সটাইল গ্রুপ ছিল ফ্রান্সের বিখ্যাত ফ্যাশন হাউজ ক্রিশ্চিয়ান ডয়েরের মালিক। এরফলে এই প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণও চলে আসে আর্নল্টের হাতে।

দেনায় জর্জরিত গ্রুপটি আর্নল্টের নেতৃত্বে ধীরে ধীরে তীরে উঠতে শুরু করে এবং এক সময় বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিলাসবহুল পণ্যের কোম্পানি হিসেবে জায়গা করে নেয়। লুই ভিটন, ক্রিশ্চিয়ান ডয়ের, হাবলট, লে পার্সিয়ানের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো আর্নল্টের প্রতিষ্ঠান এলভিএমএইচের অন্তর্ভুক্ত। ১৯৮৭ সালে লুই ভিটন এবং মোয়েট হেনেসি নিয়ে এলভিএমএইচ গ্রুপ গঠিত হওয়ার বছর দুয়েক পর, ১৯৮৯ সালে আর্নল্ট এই কোম্পানির শেয়ারের উল্লেখযোগ্য অংশ কিনে নেন। তখন থেকেই তিনি এলভিএমএইচ-এর চেয়ারম্যান ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

তিন দশকের বেশি সময় ধরে আর্নল্ট এলভিএমএইচ-কে বিলাসবহুল শৌখিন পণ্যের পাওয়ার হাউসে পরিণত করেছেন। শেম্পেইন, ওয়াইন, ফ্যাশনেবল পোশাক, চামড়াজাত পণ্য, ঘড়ি, গয়না, প্রসাধনী ও পারফিউম পণ্যের এক বিরাট সম্ভার এলভিএমএইচ। বর্তমানে সারাবিশ্বে এলভিএমএইচের সাড়ে ৫ হাজার আউটলেট রয়েছে। শুধু ইউরোপ নয় ১৯৯২ সালে চীনের বেইজিংয়ে লুই ভিটনের শোরুম খুলে এশিয়ার বৃহত্তম বাজারে বাজারেও নিজের আধিপত্য জানান দেন ইউরোপের এই ধনকুবের। ব্যক্তিজীবনে বার্নার্ড আর্নল্ট দুবার বিয়ে করেছেন; তার ৫ সন্তান রয়েছে। ব্লুমবার্গের তথ্য অনুসারে, আর্নল্টের পরিবারের প্রত্যেকেই তার প্রতিষ্ঠান এলভিএমএইচ বা এর অন্তর্ভুক্ত কোনো ব্র্যান্ডের ব্যবসায়িক কর্যক্রমের সঙ্গে জড়িত।

ফোর্বসের রিয়েল-টাইম বিলিয়নেয়ারদের তালিকায় বিশ্বের শীর্ষ ১০ জন ধনী ব্যক্তি হলেন

১. বার্নার্ড আর্নল্ট এবং তার পরিবার (ফ্রান্স), মোট সম্পদের পরিমাণ ২০৭.৬ বিলিয়ন ডলার, ২. ইলন মাস্ক (যুক্তরাষ্ট্র), মোট সম্পদের পরিমাণ ২০৪.৭ বিলিয়ন ডলার, ৩. জেফ বেজোস (যুক্তরাষ্ট্র), মোট সম্পদের পরিমাণ ১৮১.৩ বিলিয়ন ডলার, ৪. ল্যারি এলিসন (যুক্তরাষ্ট্র), মোট সম্পদের পরিমাণ ১৪২.২ বিলিয়ন ডলার, ৫. মার্ক জুকারবার্গ (যুক্তরাষ্ট্র), মোট সম্পদের পরিমাণ ১৩৯.১ বিলিয়ন ডলার, ৬. ওয়ারেন বাফেট (যুক্তরাষ্ট্র), মোট সম্পদের পরিমাণ ১২৭.২ বিলিয়ন ডলার, ৭. ল্যারি পেজ (যুক্তরাষ্ট্র), মোট সম্পদের পরিমাণ ১২৭.১ বিলিয়ন ডলার, ৮. বিল গেটস (যুক্তরাষ্ট্র), মোট সম্পদের পরিমাণ ১২২.৯ বিলিয়ন ডলার, ৯. সের্গেই ব্রিন (যুক্তরাষ্ট্র), মোট সম্পদের পরিমাণ ১২১.৭ বিলিয়ন ডলার, ১০. স্টিভ বলমার (যুক্তরাষ্ট্র), মোট সম্পদের পরিমাণ ১১৮.৮ বিলিয়ন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *