ওয়াসার আক্তারের কাছে ৬টি ফ্ল্যাটসহ শতশত কোটি টাকার সম্পদ

জীবনযাপন সর্বশেষ

ঢাকা ওয়াসার অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর কাছে অতিরিক্ত সম্পদ। ওয়াসার পানিতে ভেসে আসছে ওই অতিরিক্ত প্রকোৗশলী আক্তারের কাছে ৬টি ফ্ল্যাটসহ শতশত কোটি টাকা। ভেসে আসার মধ্যে রয়েছে রাজধানীর বুকে ছয়টি অভিজাত ফ্ল্যাট। ঢাকার কাছে আশুলিয়া,সেখানেও কিনে রেখেছেন তিন বিঘা জমি, দাম কম করে হলেও তিন কোটি টাকা। বছিলার চন্দ্রিমা হাউজিং তার দারুণ পছন্দ, সেখানে পানির পাম্প বসিয়ে দিয়ে হাউজিং কোম্পানির কাছ থেকে নজরানা নিয়েছেন তিন কাঠার প্লট। রাজধানীর খিলগাঁও তিলপাপাড়ার মাজারের পাশে তিন কাঠা জমিসহ বাড়ি কিনেছেন দুই কোটি টাকায়। চাকরির নিয়মকানুনকে থোড়াই কেয়ার করে খুলে বসেছেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও।
তিনি মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান। ঢাকা ওয়াসার অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী। এই কর্তা মাস গেলে মাইনে পান সাকল্যে ৬৮ হাজার ৪৬০ টাকা। স্ত্রী জান্নাতুল হোসনা পুরোদস্তুর গৃহিণী। আয়টা স্বল্প,তবে অনেক লম্বা তাদের বিত্তবৈভবের তালিকা। টাকা কামাইয়ের আর বৈধ কোনো পথ খোলা নেই। তার পরও দু’জনার যা সম্পত্তি, বর্তমান বাজারদর ধরে ক্যালকুলেটর চাপলেই টাকার অঙ্কটা অর্ধশত কোটি পার! এই প্রকিৗশলীর সম্পদের অতল খুঁজতে গিয়ে খোদ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্ত কর্তার চোখও উঠেছিল কপালে।
সংশ্নিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ঢাকা ওয়াসার এক রাজস্ব কর্মকর্তা ২০২০ সালের ১০ অক্টোবর আখতারুজ্জামানের অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে দুদকে অভিযোগপত্র জমা দেন। সেই অভিযোগের চিঠিতে চোখ রেখে দুদকের উপপরিচালক আলী আকবর ঢুকে পড়েন আখতারুজ্জামানের সম্পদের গভীরে। এই দুদক কর্মকর্তা সত্যি সত্যি তুলে আনেন পিলে চমকানো সব তথ্য। তদন্তকারী কর্মকর্তা আলী আকবর বলেন,’তদন্ত কাজ এখনও চলছে। অনিয়ম-দুর্নীতির বেশ ভালো তথ্যই মিলেছে। সম্পদের আরও খোঁজ চলছে।’এদিকে এসব বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুদক কার্যালয়ে প্রকৌশলী আখতারুজ্জামানকে তলব করা হয়েছে।
সম্পদের ফিরিস্তি-দুদকে জমা পড়া অভিযোগ আর সমকালের অনুসন্ধানে আখতারুজ্জামানের নানা অপকীর্তি, দুর্নীতি ও অঢেল সম্পত্তির খোঁজ মিলেছে। রাজধানীর ধানমন্ডির ৯/এ নম্বর রোডের ৩৭ নম্বর হোল্ডিংয়ে দুটি ফ্ল্যাট আখতারুজ্জামানের। একটি ২৪২৮, আরেকটি ২৪৫২ বর্গফুটের। একটি স্ত্রী,অন্যটি মেয়ের নামে। সব মিলিয়ে দুটি ফ্ল্যাটের দাম পড়েছে প্রায় সাত কোটি টাকা। সরেজমিন সেখানে গিয়ে দেখা যায়, নাভানা রিয়েল এস্টেটের ব্যবস্থাপনায় তৈরি ভবনটির কাজ শেষের পথে। ক্রেতা পরিচয় দিয়ে সাইনবোর্ডে দেওয়া ফোন নম্বরে কথা বললে মার্কেটিং বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ওয়াসার ইঞ্জিনিয়ার আখতারুজ্জামান দুটি ফ্ল্যাট কিনেছেন।প্রতি বর্গফুটের দাম ধরা হয়েছে ১৩ হাজার টাকা করে।’
বছিলার চন্দ্রিমা হাউজিংয়ে রয়েছে প্রায় দুই কোটি টাকা দামের তিন কাঠার একটি প্লট। ৭ নম্বর রোডের বি ব্লকের ৪৩৩ নম্বরের ওই প্লটের ব্যাপারে আখতারুজ্জামানের কয়েকজন সহকর্মী জানান, চন্দ্রিমা হাউজিংয়ের পরিচালক আমজাদ হোসেন একদিন ওয়াসার পানি সরবরাহ প্রকল্পের পরিচালক আখতারুজ্জামানের কাছে যান। তিনি হাউজিংয়ে পানি সরবরাহ সংযোগ ও দুটি পানির পাম্প বসিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করেন। পাম্প বসিয়ে দেওয়ার বিনিময়ে মোটা অঙ্কের টাকার প্রস্তাবও দেন আমজাদ হোসেন। আখতারুজ্জামান এই কাজের নজরানা হিসেবে নগদ টাকার বদলে তিন কাঠার একটি প্লট চেয়ে বসেন। শর্ত দেন,প্রথম পাম্পের সরঞ্জাম পৌঁছানোর পর কাজ শুরু হলেই প্লটটি লিখে দিতে হবে। এভাবে দুটি পানির পাম্প বসিয়ে দেওয়ার বিনিময়ে ওই প্লটের মালিক হন আখতারুজ্জামান। হাউজিংয়ের ৭ নম্বর রোডে বসানো পানির পাম্পের বিপরীতেই ওই প্লটটির অবস্থান। পাম্পের অপারেটর হাবিবুর রহমানকে জিজ্ঞেস করতেই তিনি আগের পাম্প অপারেটর শাহীনের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। শাহীন ফোনে বলেন, ‘পাম্পের বিপরীত পাশে দেখেন, একটি প্লটে মালিকের নাম লালকালি দিয়ে মুছে দেওয়া। ওটাই আখতার স্যারের প্লট।’ দেখা যায়, খালি ওই প্লটের দেয়ালে লেখা ‘নাজমা নীলা খান, স্বামী মো. মনসুর আলী খান, সিনিয়র সহকারী সচিব জাতীয় সংসদ সচিবালয়, জমির পরিমাণ ৪.৫০ শতাংশ।’ নিচে থাকা ফোন নম্বরে যোগাযোগ করলে নাজনীন নীলা খান বলেন, ‘বছর আটেক আগে আমার স্বামী প্লটটি কিনেছিলেন। কিন্তু রেজিস্ট্রেশন করা হয়নি। তখনই হাউজিং কোম্পানির কাছে জমিটি বিক্রি করে দেন। এখন আমার স্বামী বেঁচে নেই। পরে হাউজিং কর্তৃপক্ষ কাকে প্লটটি দিয়েছে জানা নেই।’আখতারুজ্জামান বছর দুয়েক আগে দুই কোটি টাকায় কেনেন ৫৫৫/এ খিলগাঁও তিলপাপাড়ার মাজারের পাশে তিন কাঠা জমিসহ বাড়ি। একতলা বাড়িটির ভেতরে রয়েছে ছোট্ট আঙিনা। তিনি বাড়িটি কেনেন পিডবিøউডির অবসরপ্রাপ্ত সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল হালিমের কাছ থেকে। বাবুর্চি শাহ আলম পরিবার নিয়ে সেখানে ভাড়া থাকেন। প্রতি মাসে ভাড়া নিতে যেতেন আখতারুজ্জামানের স্ত্রী। পাশের ভবনের বাসিন্দা ও গণপূর্ত অধিদপ্তরের অফিস সহকারী স্বপন কাজী বলেন, ‘ওয়াসার প্রকৌশলী আখতার সাহেব বাড়িটি কয়েক বছর আগে তার স্ত্রীর নামে ৬০ লাখ টাকা কাঠা দরে কিনেছেন।’মাজারের খাদেম মধু পাগলাও একই কথা জানালেন। যোগাযোগ করা হলে ভাড়াটিয়া বাবুর্চি শাহ আলম ফোনে বলেন, ‘এখন আর কেউ ভাড়া নিতে আসে না। খিলগাঁওয়ে আরেকজনের বাসায় ভাড়া পৌঁছে দিতে বলেছে। এখন ওই বাসায় ভাড়া পৌঁছে দিই।’
আরও ফ্ল্যাট ও জমি-আখতারুজ্জামানের বিষয়ে তদন্তে নেমে তার আরও কিছু সম্পত্তির খোঁজ পেয়েছে দুদক। এর মধ্যে রয়েছে জ-১৯ খিলগাঁওয়ের কাজী ভিলায় ১২০০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট। রামপুরার বনশ্রনীর সি বøকের ৬ নম্বর রোডের প্লট ১ ও ৩ নম্বরের ফিউশন ভ্যালিতে দোতলায় ও সাত তলায় ১১০০ বর্গফুটের দুটি ফ্ল্যাট। দোতলারটা ভাড়া দিয়েছেন আরএফএল কোম্পানির কাছে। সাত তলার ফ্ল্যাটটিও ভাড়া দেওয়া। মিরপুর ডিওএইচএসের ২৬ নম্বর রোডের ৭৫৬ নম্বর প্লটের মাহমুদ মঞ্জিলে রয়েছে ২২০০ বর্গফুটের আরেকটি ফ্ল্যাট। এসব ফ্ল্যাটের কোনোটিরই দাম ৭০ লাখ টাকার কম নয়।এছাড়া আশুলিয়ার জিরাবো বাজারের পূর্ব দিকে ইছরকান্দি মৌজায় কেনা রয়েছে তিন বিঘা জমি। যেটার দাম তিন কোটি টাকার কম না। ওই জমির একাংশে রয়েছে একটি ঘর। সেখানেই বাস করেন পাহারাদার সাত্তার। তিনি বলেন, ‘আখতার স্যার এই জমি পাহারা দেওয়ার জন্য আগে বেতন দিতেন, এখন দেন না। বলেছেন, জমিতে চাষবাস করে খেতে। আমি জমিতে চাষবাস করে খাচ্ছি।’
ব্যবসায়ও সমান পটু :গণকর্মচারী আচরণ বিধিমালা-১৯৭৯ (সংশোধিত ২০১১) অনুযায়ী সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কোনো কর্মকর্তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ নেই। তারপরও রাজধানীর ১৩৭ শান্তিনগরের নোভেল হাউসের নবম তলায় আখতারুজ্জামান খুলে বসেছেন রিয়েল এস্টেটের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। নাম ‘ক্রিসিন্ডা লিমিটেড’। পরিচয় গোপন রেখে প্রতিষ্ঠানটির মালিক সম্পর্কে ফোনে জানতে চাইলে ইঞ্জিনিয়ার মোরশেদ পরিচয় দিয়ে একজন বলেন, ‘আমরা চারজন ইঞ্জিনিয়ার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটির মালিক। ওয়াসার অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আখতারুজ্জামানও আছেন। কাজেই আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ খুবই লাভজনক ও ঝুঁকিমুক্ত।’ জানা গেছে, ওয়াসার সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সিরাজ ও ওয়াসারই একজন তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি শুরু করেছিলেন। এ ব্যাপারে মো. সিরাজ বলেন, ‘আমি ওই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নেই। আখতার ও তার এক বন্ধু এটা চালান বলে শুনেছি।’
যেভাবে ‘টাকার কুমির’-২০১০ সালে গুলশান-বারিধারা লেকের পানি দূষণমুক্ত করতে ৫৪ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেয় ওয়াসা। লেকে সংযুক্ত বাসাবাড়ির স্যুয়ারেজ লাইন বন্ধ করে এলাকার পরিবেশকে দূষণমুক্ত করাই ছিল প্রকল্পের উদ্দেশ্য। প্রকল্পের পরিচালক ছিলেন এই আখতারুজ্জামান। প্রকল্প শেষ হওয়ার পর অভিযোগ ওঠে কাজ না করে ঠিকাদারের সঙ্গে যোগসাজশ করে প্রায় পুরো টাকাই মেরে দিয়েছেন তিনি। এ ঘটনায় ২০১৫ সালে স্থানীয় সরকার বিভাগের তৎকালীন যুগ্ম সচিব অমিতাভ সরকারকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়,লেকের পানি দূষণমুক্ত করার প্রকল্প বাস্তবায়নের পরও বিদ্যমান স্যুয়ারেজের আউটলেট অপসারণ বা বন্ধ করা হয়নি। পরে ২০১৬ সালের ২৮ নভেম্বর স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে প্রকল্প পরিচালক আখতারুজ্জামানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করে এক মাসের মধ্যে মন্ত্রণালয়কে জানাতে ওয়াসাকে নির্দেশ দেওয়া হয়। ওয়াসা কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো ২০১৭ সালে আখতারুজ্জামানকে পদোন্নতি দিয়ে তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী করে। ২০১৮ সালে তার চেয়ে জ্যেষ্ঠ আট কর্মকর্তাকে ডিঙ্গিয়ে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ ব্যাপারে ঢাকা ওয়াসার সচিব শারমিন হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।গাড়ি তছরুপ-আখতারুজ্জামান ঢাকা ওয়াসা কর্মকর্তা-কর্মচারী বহুমুখী ভোগ্যপণ্য সমবায় সমিতির প্রকল্পের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন ২০১৮ সালের ৭ নভেম্বর থেকে ২০২০ সালের ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এই সময়ে প্রকল্পের প্রাইভেটকারটি (ঢাকা মেট্রো-গ ১৭-৩৬৭৭) চেয়ারম্যান হিসেবে ব্যবহার করতেন তিনি। ২০২০ সালের ২৬ ডিসেম্বর নতুন কমিটি হওয়ার পর গাড়িটি ফেরত চেয়ে আখতারুজ্জামানকে কয়েকবার চিঠি দেওয়া হলেও তিনি তা দেননি। সমিতির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক শাহাব উদ্দিন জানান, বিষয়টি নিয়ে আখতারুজ্জামানকে কয়েকবার বলা হয়েছে। তখন গাড়ি না দিয়ে সামান্য কিছু টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলেন। সেই টাকাও তারা নেননি।
মেরে দেওয়া হয় ১৩২ কোটি টাকা-গত ১৭ অক্টোবর ঢাকা ওয়াসা কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতি ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করে ওয়াসা কর্মচারী সমিতির ২০১৮-২০ সময়ের একটি নিরীক্ষা প্রতিবেদন তুলে ধরে। সমবায় অধিদপ্তরের তৈরি ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০ অর্থবছরের সময়ে সমিতির ১৩২ কোটি ৪ লাখ ১৭ হাজার ৪৬০ টাকার কোনো হদিস নেই। যারা দায়িত্বে ছিলেন তারা সবাই মিলে এই টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ওই সময় সমিতির সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন আখতারুজ্জামান। সাধারণ সম্পাদক ছিলেন জাকির হোসেন। এ ব্যাপারে জাকির হোসেন বলেন,আমি সব কিছু আখতারুজ্জামানকে বুঝিয়ে দিয়েছি। কোনো কিছু জানতে চাইলে তাকেই জিজ্ঞাসা করেন।’
বক্তব্য নিয়েও নাটক :এসব বিষয়ে বক্তব্য জানতে যোগাযোগ করা হলে ঢাকা ওয়াসার অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান বলেন,’বিভিন্ন সময় সাংবাদিকরা গণমাধ্যমে আমাকে নিয়ে নেতিবাচক প্রতিবেদন লিখেছে। কাজেই আমি কোনো কথা বলব না। কিছু জানতে চাইলে তথ্য কর্মকর্তার কাছে লিখিতভাবে প্রশ্ন দেন। তার মাধ্যমেই জবাব পাবেন। তবে ওয়াসার সংশ্লিষ্টর সাথে শত চেষ্ঠা করেও জবাব পাওয়া যায়নি।সুত্র-সমকাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *