কাঠমিস্ত্রির পোলা এপিএস মিজানের অর্থ-সম্পদের পাহাড়!

অপরাধ দুর্নীতি দমন

বিশেষ প্রতিনিধি: একজন কাঠমিস্ত্রির পোলা তার সারাজীবনের আখের গুছিয়ে নিতে সুস্থ-সবল মানুষকেউ অসুস্থ দেখিয়ে তার চিকিৎসা ভাতার অর্থও লুটে নিয়েছেন। তিনি একইসঙ্গে মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন প্রকল্প থেকে কোটি কোটি টাকা কমিশন হাতিয়ে নিয়ে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। ভুয়া প্রতিবন্ধীদের নামে নেয়া ভাতাও তার পেটে গেছে। মাত্র কয়েক বছরে এপিএস মিজানের অর্থ-সম্পদের তথ্য দেখে দলের কেউকেউ হয়েছেন চরকগাছ।তিনি হলেন সদ্য ছিটকেপড়া সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের এপিএস মিজানুর রহমান মিজান। ওরফে কাঠমিস্ত্রির পোলা মিজান। এখন লালমনিরহাট জেলায় তাকে সাবেক মন্ত্রীর চেয়ে বেশী সমিহ করছেন এলাকার জনগন। দরিদ্র কাঠমিস্ত্রির পোলা মিজান কি এমন আলাদিনের চেড়াগ হাতে পেয়েছিল এটাই সবার কাছে এখন বড় প্রশ্ন হয়ে সামনে আসছে? লালমনিরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক সমাজমকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের এই সাবেক এপিএস মিজানের বিরুদ্ধে ক্ষমতায় থাকাকালিন একের পর এক আলোচনা সমালোচনার মুখোমুখি হলেও কেউ টু শব্দটিও করতে পারেনি। কখনো মাদ্রাসার জমি দখল নিয়ে, গাড়িতে মাদকের চালান ধরা পড়া নিয়ে, আবার তিস্তা নদীর বালু নিয়ে এমন আরও বিভিন্ন সমালোচিত কাজের সাথে জড়িত ছিলেন। ক্ষমতার জোড়ে আদিতমারীতে আওয়ামী লীগ নেতাকেউ মারধর করেছিলেন ছিটকে পড়া এই এপিএস মিজান। ক্ষমতা ভোগের সময় অভিযোগ রয়েছে টর্চারসেলও নাকি তার ছিলো। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লালমনিরহাট এলাকার বিভিন্ন শ্রেনিপেশার মানুষের সাথে আলাপ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। সুত্রগুলো জানায়, বিগত সময়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর সাবেক এই এপিএস মিজানের দাপটে নিজ দল আওয়ামী লীগেরই বহু নেতাকর্মি আতঙ্কের মধ্যে ছিলেন, কেউকেউ এলাকাও ছেড়েছিলেন এপিএসগিড়ি চলে যাওয়ার পরে কেউকেউ আবারও এলাকায় ফিরে আসতে দেখা যাচ্ছে। এপিএস থাকাকালিন তার অপ্রতিরোধ্য অন্যায়ের প্রতিবাদ করলেই মিজান বাহিনীর নির্যাতন নেমে আসত। দলীয় নেতা নজরুল ইসলাম মৃধাকে টেনে হিচড়ে মঞ্চ থেকে নামিয়ে এপিএস মিজান ও তার লোকজন তাকে মারধর করেছিলেন। স্থানীয় সুত্রগুলো জানায়, লালমনিরহাট-২ আসনে মন্ত্রীপুত্র ও এপিএস মিজানকে ঘিরে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছিল। এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সীমান্ত ও চরে মাদকের জমজমাট ব্যবস্যা হত। ট্রেনেও মাদকের চালান দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানোর কাজে তার বাহিনীর সদস্যদের সহযোগীতার অভিযোগ রয়েছে। জানা গেছে, লালমনিরহাট-২ (আদিতমারী-কালীগঞ্জ) আসনের সাংসদ নুরুজ্জামান আহম্মেদ প্রথম বার খাদ্য প্রতিমন্ত্রী ও ২য় বার সমাজকল্যাণ পূর্ণমন্ত্রী হয়েছিলেন। এসময় মোঃ মিজানুর রহমান ওরফে মিজান মন্ত্রীর এপিএস হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। মিজানের বাড়ি আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা ইউনিয়নের বারোঘড়িয়া (বাবুপাড়া) গ্রামে। তার বাবা নজরুল ইসলাম পেশায় একজন দরিদ্র কাঠমিস্ত্রী। এই দশ বছরে মিজান ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধভাবে শত কোটি টাকার মালিক হন।
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র জানায়, বিভিন্ন দপ্তরের নিয়োগ ও টেন্ডার বাণিজ্য, বদলীসহ সরকারি বিভিন্ন কাজ পাইয়ে দেওয়ার নামে উৎকোচ গ্রহণ এবং হাজার হাজার সুস্থ মানুষকে অসুস্থ’ বানিয়ে সরকারি চিকিৎসা সহায়তার নামে সমাজকল্যাণ মন্ত্রালয়ে থেকে টাকা পাইয়ে দিয়ে রোগীপ্রতি ২০হাজার টাকা অর্থগ্রহণ করতেন তিনি। মাদ্রাসার জমি দখলও তিনি করেছেন। অভিযোগ ছিলো তার স্ত্রীর গাড়ীতে মাদক বহন করা হত। এছাড়াও সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অবৈধ ভাবে তিস্তা নদী থেকে বালু উত্তোলনের প্রায় ৮০% অর্থগ্রহণ ও বিভিন্ন ভাতা পাইয়ে দিয়ে উৎকোচ নিয়েছেন তিনি। এসব অপকর্ম সহযোগিতার জন্য তার রয়েছে সাবেক ও বর্তমান আদিতমারী-কালিগঞ্জ উপজেলা ও লালমনিরহাট জেলায় ছিল নিজস্ব বাহিনী।
সাবেক এই এপিএস মিজানের গ্রামের বাড়ি মহিষখোঁচা ইউনিয়নের বারোঘড়িয়া (বাবুপাড়া) গ্রামে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, এপিএস হওয়ার পরপরেই তার বাড়ি টিনের ছাপড়া ভেঙ্গে কোটি টাকা ব্যয়ে রাজপ্রাসাদের ন্যায় দ্বিতল বিলাসবহুল বাড়ি নির্মাণ করেন। বাড়ির সামনে দিয়ে পথচারিরা যাওয়ার বলছে কাঠমিস্ত্রিও পোলা এপিএস মিজানের লুটের টাকার প্রসাদ। তার রয়েছে নিজ গ্রামসহ লালমনিরহাট জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ১০ থেকে ১১ একর কৃষিজমি, বিভাগীয় শহর রংপুরের রয়েছে ২০ কোটি টাকা মূল্যের ২০ শতক জমি, রাজধানী ঢাকায় রয়েছে তার একাধিক ফ্ল্যাট, অভিযোগ আসছে যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে তার প্রায় ২৫ কোটি টাকা মূল্যের একটি ক্রয় করা বাড়ি । এই বাড়িতেই তার স্ত্রী ও সন্তান স্থায়ীভাবে বসবাস করে আসছে। এছাড়াও নিকটতম পরিবারের বিভিন্ন সদস্যদের একাউন্টে নামে-বেনামে জমা রয়েছে বিপুল পরিমান অর্থ। অভিযোগের সার্বিক বিষয় নিয়ে সাবেক এপিএস মিজানের সাথে মুটো ফোনে যোগাযোগের চেষ্টাও করেও তাকে পাওয়া যায়নি। ফোন রিসিভ করেননি,হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ দিয়েও জবাব পাওয়া যায়নি। এলাকায় কাঠমিস্ত্রির সন্তান মিজান এপিএসের উখ্যান ও ধনসম্পদ নিয়ে মানুষের মুখে মুখে চলছে নানা সমালোচনা। দেশের একাধিক সামাজিক সংগঠনের নেতারা বলেছেন সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর আর্শিবাদে এপিএসের এমন উখ্যান দেশের আর কোন কোন মন্ত্রীর আছে তা খতিয়ে দেখা উচিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *