গোপনে ঢাকা সফর করে গেলেন জ্যাক মা

ডিজিটাল বাংলাদেশ তথ্য প্রযুক্তির সংবাদ

গোপনে ঢাকায় এসেছিলেন আলিবাবার প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মা। গত রবিবার (২ জুলাই) গুলশানের একটি বিলাসবহুল হোটেলের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর (সেলস) মো. ওয়ালিদ শামীম জ্যাক মার সঙ্গে একটি গ্রুপ ছবি তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্ট করে ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘ঢাকা সফরে জ্যাক মাকে স্বাগত জানানো ছিল অত্যন্ত সম্মানের ব্যাপার।’

নেপালি সংবাদমাধ্যম ‘কাঠমান্ডু পোস্ট’ নেপালের ইমিগ্রেশন দপ্তরের বরাত দিয়ে জানায়, ঢাকা হয়ে একটি বিশেষ ফ্লাইটে গত মঙ্গলবার (২৭ জুন) কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন জ্যাক মা। নেপালের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (সিএএএন) তথ্য কর্মকর্তা জ্ঞানেন্দ্র ভূল জানান, জ্যাক মাকে নিয়ে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া বিমানটিতে মোট ৬ জন ক্রু ছিল। এদিকে একজন ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তার বরাত দিয়ে কাঠমান্ডু পোস্ট বলেছে, নেপালের অল্প কয়েকজন কর্মকর্তাই জ্যাক মার সফর সম্পর্কে জানতেন। তবে দেশটির প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারীরা জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দাহাল এবং অর্থমন্ত্রী প্রকাশ শরণ মাহাতোর সঙ্গে দেখা করার জন্য আগেই অনুরোধ জানিয়েছিলেন জ্যাক মা। নেপালের ব্যবসায়ী নেতাদের একজন সদস্য কাঠমাণ্ডু পোস্টকে বলেন, জ্যাক মার কাঠমান্ডু সফরকে একটি ‘ব্যবসায়িক সফর’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এর বেশি কোনো তথ্য তিনি দিতে পারেননি।

পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম পাকিস্তান অবজার্ভারের প্রতিবেদনে বলা হয়, পরে জ্যাক মা ২৯ জুন পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে পৌঁছান। সেদিনই তিনি লাহোর সফর করেন। পরের দিন (৩০ জুন) তিনি ব্যক্তিগত বিমানে করে উজবেকিস্তানের উদ্দেশ্যে রওনা হন। পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের তথ্য অনুযায়ী, নেপাল সফর শেষে পাকিস্তানের লাহোরে পৌঁছান জ্যাক মা। তার সঙ্গে ছিল সাত সদস্যের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল। তারা ছিলেন চীন, ডেনমার্ক এবং যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ী প্রতিনিধি। প্রতিনিধিদলের দু’জন সদস্য ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া ন্যারেটিভকে বলেন, জ্যাক মা চীনের বাইরে ব্যবসা সম্প্রসারণের কথা ভাবছেন।

তবে পাকিস্তানে সরকারের কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেননি জ্যাক মা। সাংবাদিকদের সঙ্গেও কথা বলেননি। পাকিস্তানের বিনিয়োগ বোর্ডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আজফার আহসান ইন্ডিয়া ন্যারেটিভকে বলেছেন, এটি ছিল একেবারেই ব্যক্তিগত সফর। তবে একাধিক সূত্র বলছে, অর্থনৈতিক সংকটে নিপতিত পাকিস্তানে দাতব্য কার্যক্রম বাড়ানোর পরিকল্পনা করছেন জ্যাক মা।

ঢাকার একটি হোটেলে জ্যাক মা। ছবি: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে সংগৃহীত

চীনের ব্যাংক ব্যবস্থা এবং সরকারি নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর সমালোচনা করার পর ২০২০ সালের অক্টোবর থেকে ২০২১ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ‘নিখোঁজ’ ছিলেন জ্যাক মা। সরকারও তার ব্যাপারে কিছু বলছিল না। পরে অ্যান্ট গ্রুপের দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে শিক্ষকতা পেশায় যোগ দেয়ার কথা জানান তিনি। পাঁচ বছর আগে জ্যাক মার প্রতিষ্ঠিত আলিবাবা এরই মধ্যে ই-কমার্স কোম্পানি দারাজ অধিগ্রহণ করেছে। দারাজ এখন দক্ষিণ এশিয়ার বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার এবং নেপালে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ার সূচক অনুসারে, ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত জ্যাক মা চীনের চতুর্থ ধনী ব্যক্তি। তার মোট সম্পদ ৩৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। বিশ্বের ৩৯তম ধনী ব্যক্তি তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *