নিষ্ফ্ক্রিয় এবং দলীয় কর্মসূচিতে হাজির না হওয়া নেতাদের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে বিএনপি। দলটির জ্যেষ্ঠ নেতারা জানিয়েছেন, আগামীতে যে কোনো পর্যায়ের নির্বাচনে মনোনয়নের ক্ষেত্রেও তাদের কম গুরুত্ব দেওয়া হবে।
সম্প্রতি দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে টানা এগারো দিন কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। নতুন করে আরও পাঁচ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এসব ছাড়াও গত এক বছর ধরে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী, খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবিতে নানা কর্মসূচি পালন করেছে দলটি।
বিএনপির কয়েকজন নেতা জানান, এসব কর্মসূচিতে কেন্দ্রীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের যেসব নেতা কম উপস্থিত ছিলেন কিংবা মোটেও উপস্থিত ছিলেন না, তাদের তালিকা করা হয়েছে। তালিকাটি ইতোমধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া যেসব উপজেলা ও জেলায় কর্মসূচি পালিত হয়নি তারও একটি তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। ওইসব জায়গায় কোনো কর্মসূচি পালিত হয়নি, নেতাদের কোনো গাফিলতি ছিল কিনা সে বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, দলের পুনর্গঠন একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এই পুনর্গঠনে কর্মকাণ্ড মূল্যায়নও একটি সাধারণ বিষয়। যারা ভালো কাজ করবেন তারা সবসময় পুরস্কৃত হবেন। আর যারা পারবেন না তারা রাজনীতিতে পিছিয়ে পড়বেন। সক্রিয় নেতাদের সব সময়ই গুরুত্ব দেওয়া হয়। এটাই নিয়ম।
২০১৬ সালের ১৯ মার্চ বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের কয়েক মাস পর ৫৯২ সদস্যের জাতীয় নির্বাহী কমিটি ঘোষণা করা হয়। সেটি আরও বেড়ে এখন ৬০১ সদস্যের হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন নেতা বলেন, কমিটিতে অনেককে খুশি রাখতে পদ-পদবি দেওয়া হয়। দলকে চাঙ্গা রাখতে এ কৌশল নেওয়া হয় তখন। কিন্তু পদ পাওয়ার পর নিষ্ফ্ক্রিয় হয়ে পড়েন অনেক নেতা। ব্যবসা-বাণিজ্য আর নিজের কর্মজীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তারা। তৃণমূল নেতাকর্মীরা মনে করছেন, কেন্দ্রের এক-তৃতীয়াংশ নেতাও যদি রাজপথে সক্রিয় থাকতেন, তাহলে তাদের প্রতিটি কর্মসূচি সফল হতো।
বিএনপির একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা বলেন, কিছু নেতাকর্মী শতভাগ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে নিজের জীবন ও সম্পদ বিসর্জন দিচ্ছেন। কিন্তু একশ্রেণির নেতাকর্মী শতভাগ কর্মসূচিতে অনুপস্থিত থেকেও সাংগঠনিক পদে বহাল আছেন। সক্রিয় ও নিষ্ফ্ক্রিয় নেতাকর্মীদের মধ্যে বিদ্যমান এই পার্থক্যের কারণে বিএনপির গণতান্ত্রিক আন্দোলন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কেন্দ্রীয় কমিটিতেও এরকম অনেক নেতা রয়েছেন নিষ্ফ্ক্রিয়দের তালিকায়।
জানা গেছে, দল পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে নিষ্ফ্ক্রিয় নেতাদের মধ্যে কর্নেল (অব.) আনোয়ারুল আজিমকে কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক থেকে সরিয়ে মোস্তাক মিয়াকে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. মীর ফাওয়াজ হোসেন শুভকে সরিয়ে অধ্যাপক ডা. এস এম রফিকুল ইসলাম বাচ্চুকে পদায়ন করা হয়েছে। তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক শরীফ শাহ কামাল তাজকে সরিয়ে এ কে এম ওয়াহিদুজ্জামানকে পদায়ন করা হয়েছে। রাজশাহী বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বিদেশে অবস্থান করায় আবদুল মমিন তালুকদার খোকাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদায়ন করা হয়েছে সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক পদে সায়েদুল হক সাইদকে। এ ছাড়া এম এ মালেক, এবায়দুল হক চান, তারিকুল ইসলাম তেনজিং, আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারীকে নির্বাহী কমিটির সদস্য করা হয়েছে।
বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে কিংবা কখনও কখনও চেয়ারম্যানের ক্ষমতাবলে এসব রদবদল করা হয়।