রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধে জড়াবে না যুক্তরাষ্ট্র: সের্গেই ল্যাভরভ

আন্তর্জাতিক

রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র কূটনৈতিক মাধ্যমে জানিয়েছে, তারা রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধে জড়াবে না।

রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টিভিতে বুধবার প্রচারিত দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে ল্যাভরভ জানিয়েছেন, ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্র প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পাঠাবে। কিন্তু এ ব্যবস্থার সঙ্গে কোনো মার্কিন বিশেষজ্ঞকে পাঠাবে না।
এ ব্যাপারে ল্যাভরভ বলেছেন, ‘আমরা কূটনৈতিক মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে জানতে চেয়েছিলাম তারা এখনও ইউক্রেনে প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পাঠাতে চায় কিনা? আমরা সঙ্গে এও বলেছিলাম, প্যাট্রিয়ট একটি জটিল ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা। এটি পরিচালনায় আমেরিকান বিশেষজ্ঞ প্রয়োজন হবে। তারা কি প্যাট্রিয়টের সঙ্গে ইউক্রেনে বিশেষজ্ঞও পাঠাবে?

এর জবাবে যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, কোনো বিশেষজ্ঞকে পাঠাবে না। কারণ রাশিয়ার সঙ্গে তারা সরাসরি যুদ্ধে জড়াতে চায় না এবং জড়াবেও না।’ সূত্র: বিবিসি ও আলজাজিরা।

এদিকে অল্প সময়ের ব্যবধানে একের পর এক রুশ ক্ষেপণাস্ত্র ইউক্রেনের বড় শহরগুলোর বিভিন্ন স্থাপনায় পড়ার পর আক্রান্ত দেশটিতে সতর্কতামূলক সাইরেন বাজানো হয়েছে। তবে এর প্রায় অর্ধেক ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করেছে বলে জানিয়েছে কিয়েভ।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা মিখাইলো পদোলিয়াক বলেছেন, বৃহস্পতিবার সকালে রাশিয়া সংবেদনশীল বিভিন্ন স্থাপনা ও জনবহুল এলাকা লক্ষ্য করে ১২০টিরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। রাজধানী কিয়েভে অন্তত দুটি বড় বিস্ম্ফোরণের শব্দ পাওয়া গেছে। তবে ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাত নাকি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

খারকিভ, ওডেসা, লভিভ ও জিতোমিরের মতো শহরগুলোতেও বিস্ম্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ ওডেসার আঞ্চলিক নেতা ম্যাকসিম মারশেঙ্কো বলেছেন, ইউক্রেনের ওপর ‘বড় ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা’ হয়েছে। ইউক্রেনের বিমানবাহিনী জানিয়েছে, সমুদ্র ও আকাশপথে বিভিন্ন দিক থেকে এসব ক্ষেপণাস্ত্র এসেছে। রাশিয়া তাদের হামলায় ইরানের বিপুল সংখ্যক কামিকাজে ড্রোন ব্যবহার করেছে।

বৃহস্পতিবার সকালে ইউক্রেনের সব অঞ্চলে সতর্কতামূলক সাইরেনের শব্দ শোনা গেছে। আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাপনা কাজ করছে জানিয়ে প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা ওলেক্সি আরিস্তোভিচ বেসামরিকদের নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নিতে অনুরোধ জানিয়েছেন। কিয়েভের কর্তৃপক্ষ বলেছে, নিচে পড়ে যাওয়া একটি রকেটের ধ্বংসাবশেষ একটি বেসামরিক ভবনে আঘাত হেনেছে। ইউক্রেনের শীর্ষ জেনারেল ভ্যালেরি জালুঝনি টেলিগ্রামে লিখেছেন, তাঁরা রাশিয়ার ৬৯টি ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে ৫৪টি গুলি করে ভূপাতিত করেছেন। উপদেষ্টা পদোলিয়াক বলেছেন, মস্কো ‘গণহারে সংবেদনশীল স্থাপনা ধ্বংস এবং বেসামরিক নাগরিক হত্যা’ করতে চাচ্ছে।

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে রাশিয়া ইউক্রেনের স্থাপনাগুলোতে ঝাঁকে ঝাঁকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে দেশটির বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থাপনা প্রায় ধ্বসিয়ে দিয়েছে। কিয়েভের মেয়র বলেছেন, সর্বশেষ রুশ হামলায় ৪০ শতাংশ বাসিন্দা বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়েছে। লভিভের মেয়র বলেছেন, তাঁর শহরের ৯০ শতাংশই বিদ্যুৎহীন। রাজধানীতে নতুন করে লোডশেডিং ও পানির সংকট সৃষ্টি হতে পারে বলে সতর্ক করেছে কর্তৃপক্ষ। রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা থেকে বাঁচতে ইউক্রেন দীর্ঘদিন ধরেই মিত্রদের কাছে অতিরিক্ত আকাশ প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম চেয়ে আসছিল। যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি তাদের সেই আবদারে সাড়া দিয়ে কিয়েভকে প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা সরবরাহে রাজি হয়েছে।

এদিকে বেলারুশের রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত বেলটা নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, দেশটি ইউক্রেনীয় এস-৩০০ ক্ষেপণাস্ত্র বেলারুশের ভূখণ্ডে পড়েছে। মিনস্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, বেলারুশের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রকেটটি গুলি করেছে নাকি এটি একটি মিসফায়ার ছিল তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এতে হতাহতের কোনো তথ্য নেই।

জার্মানির অর্থমন্ত্রী রবার্ট হ্যাবেক বলেছেন, কিয়েভের প্রতি পশ্চিমা সমর্থনের কারণে ইউক্রেনে রাশিয়া পরাজিত হবে। ডিপিএ বার্তা সংস্থাকে তিনি বলেন, রুশ প্রেসিডেন্ট ভদ্মাদিমির পুতিন যুদ্ধে হেরে যাচ্ছেন। কারণ, ইউক্রেনের সেনাবাহিনী ইউরোপ, ন্যাটো এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে অস্ত্র পাচ্ছে এবং সেগুলোকে দক্ষ, নিপুণ এবং কৌশলগতভাবে এবং বীরত্বের সঙ্গে ব্যবহার করছে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *