সরকারি যানবাহনে স্ত্রীর শপিং, শ্যালিকার বায়না, কাঁচাবাজার করায় বেপরোয়া আমলারা

অর্থনীতি তথ্য প্রযুক্তির সংবাদ দুর্নীতি দমন সর্বশেষ

কারওয়ান বাজার একটি টিভি ক্যামেরা অন করে রাখা হয়েছে একটি প্রাইভেট কারের দিকে। বিদ্যুৎ বিভাগে কর্মরত এক কর্মকর্তা সকাল ৭টায় গাড়ি থেকে নেমে বাজারে ঢুকেছেন। বাজার শেষ করে দু’ঘণ্টা পর তিনি এলেন। ড্রাইভার নেমে তরিতরকারি গাড়িতে উঠালেন। ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করে সাংবাদিক জানলেন তিনি দুই ঘণ্টাই এসি চালু রেখে সিটেই ঘুমিয়েছেন। গাড়ির যাত্রী ৩২ থেকে ৩৪ বছরের যুবকের সামনে সাংবাদিক গাড়ি কার জানতে চাইলেন। তিনি জানালেন, প্রাইভেট কারটি বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মকর্তার। তিনি ওই অফিসের কর্মচারী এবং স্যারের বাজার করতে এসেছেন। এটা তার রুটিন ওয়ার্ক। সপ্তাহে ৭ দিন তিনি এভাবে বাজার করেন। ক্যামেরায় ওই গাড়ির পাশে আরো ৬-৭টি প্রাইভেট কার দেখা গেল। তিনটি গাড়ির ড্রাইভার জানালেন তারা সরকারি পোল থেকে গাড়ি নিয়ে স্যারদের বাজার করতে এসেছেন। তারা জানান, শুধু বাজার করা নয়, প্রতি কর্মদিবসে ভিখারুন্নেসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের পাশের রাস্তায় ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা পার্ক করে রাখা হয়। সেখানে স্যারের (সরকারি কর্মকর্তা) মেয়ে পড়াশোনা করেন। এই কর্মকর্তা নয়, হাজার হাজার সরকারি কর্মকর্তা এভাবে সরকারি গাড়ি ব্যবহার করে থাকেন। কৃচ্ছ্রতা সাধনের লক্ষ্যে সরকার বিদ্যুতের লোডশেডিং করছে এবং সরকারি অফিসে ২০ শতাংশ খরচ কমানো, জ্বালানি খবর কমানোর নির্দেশনা দিয়েছে। কিন্তু যারা নির্দেশনা দিয়েছে তারাই সেটা পালন করছে না। কাঁচাবাজার করা, ছেলেমেয়েদের স্কুলে আনা নেয়া, স্ত্রীর শপিং, শ্যালিকার বায়না সবকিছুতেই সরকারি যানবাহন ব্যবহার হচ্ছে। অথচ জনগণকে লোডশেডিংয়ের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। একজন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বলেছেন, সরকারি যানবাহনে সরকারি কর্মকর্তারা যেভাবে বাজার করা, ছেলেমেয়েদের স্কুলে আনা-নেয়া করা এবং পিএস, এপিএসদের ব্যবহারে যে জ্বালানির অপচয় হয়; সেটা বন্ধ হলে লোডশেডিং ও কৃচ্ছ্রতা সাধনের প্রয়োজন পড়ত না।

সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কতটি যানবাহন ব্যবহার করেন, তার সঠিক পরিসংখ্যা নেই। যানবাহন অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, সরকারি গাড়ি ১ হাজার ৭৫০টি রয়েছে। কিন্তু সচিবালয়ের প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন প্রকল্পের শত শত গাড়ি নেন সরকারি কর্মকর্তারা। মন্ত্রী থেকে শুরু করে মন্ত্রীদের পিএস পর্যন্ত বিভিন্ন প্রকল্পের গাড়ি ব্যবহার করে থাকেন। এছাড়াও সরকার সরকারি কর্মকর্তাদের প্রাইভেট কার ক্রয়ের জন্য ৪০ লাখ টাকা করে ঋণ দিয়েছে। ওই সব প্রাইভেট কার পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য মাসে ৪০ হাজার করে টাকা দেয়া হয়। সরকারি যানবাহন ব্যবহারে এলাহিকাণ্ড চলছে।

জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী  বলেন, জ্বালানি খাতের বরাদ্দের টাকায় কতটি গাড়ি চলছে এবং যানবাহন অধিদফতরের কয়টি গাড়ি এলজিআরডি বিভাগে আছে। নথি দেখে বলতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *